চ্যাটজিপিটির অতিরিক্ত ব্যবহারে মস্তিষ্কের ক্ষতি: স্মৃতি ও চিন্তাশক্তি হ্রাসের সতর্কতা

 গুগলের পর এখন চ্যাটজিপিটি—কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে অনেক সহজ করে দিয়েছে। যেকোনো প্রশ্নের তাৎক্ষণিক উত্তর থেকে শুরু করে কবিতা লেখা, রেসিপি, গণিত সমাধান, বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাসাইনমেন্ট কিংবা রিপোর্ট তৈরি—সবকিছুই এখন এআই চ্যাটবটের মাধ্যমে সম্ভব। কিন্তু এই সুবিধার পাশাপাশি একটি উদ্বেগজনক তথ্য সামনে এসেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, চ্যাটজিপিটির মতো এআই টুলের অতিরিক্ত ব্যবহার মানুষের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে, স্মৃতি মুছে যাচ্ছে এবং চিন্তাভাবনার ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে।

‘দি কগনিটিভ কস্ট অব ইউজিং লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলস’ শীর্ষক একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, চ্যাটজিপিটির মতো এআই টুলের ব্যবহার মস্তিষ্কের চিন্তাশক্তি, শেখার ক্ষমতা এবং তথ্য ধরে রাখার সক্ষমতা হ্রাস করছে। ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি)-তে ৫৪ জন শিক্ষার্থীর ওপর চার মাস ধরে পরিচালিত এই গবেষণায় তিনটি গ্রুপ তৈরি করা হয়। এক দল চ্যাটজিপিটি, এক দল গুগল এবং অপর দল কোনো প্রযুক্তির সাহায্য ছাড়া বিভিন্ন কাজ সম্পন্ন করে। পরবর্তীতে ইলেকট্রোএনসেফালোগ্রাফি (ইইজি) ডিভাইসের মাধ্যমে তাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা পরীক্ষা করা হয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, চ্যাটজিপিটি ব্যবহারকারী গ্রুপ প্রাথমিকভাবে দ্রুত ফলাফল দেখালেও দীর্ঘমেয়াদে তাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ধীর ও স্থির হয়ে পড়েছে। এই গ্রুপের শিক্ষার্থীদের মধ্যে তথ্য মনে রাখার ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে এবং মস্তিষ্কের সক্রিয়তা কমে গেছে। বিপরীতে, যারা কোনো প্রযুক্তির সাহায্য ছাড়া কাজ করেছেন, তাদের প্রজেক্টের ফলাফল এবং ভাষাগত দক্ষতা অনেক ভালো ছিল।

যারা গুগল ব্যবহার করেছিলেন, তাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা মাঝারি পর্যায়ে ছিল। চ্যাটজিপিটি ব্যবহারকারীদের তুলনায় তাদের চিন্তাশক্তি বেশি ছিল এবং তারা নিজস্ব আইডিয়া ও ভাবনা তৈরিতে সক্ষম ছিলেন। গবেষণায় উঠে এসেছে, নিয়মিত চ্যাটজিপিটি ব্যবহারকারীদের শুধু চিন্তাভাবনার পদ্ধতিই নয়, সামগ্রিক চিন্তাশক্তির ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এআই-এর ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা তাদের সৃজনশীলতা এবং লেখার ক্ষমতা হ্রাস করছে।

চ্যাটজিপিটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআই-এর পক্ষ থেকেও এই বিষয়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। গবেষকরা পরামর্শ দিয়েছেন, এআই টুল ব্যবহারে ভারসাম্য রক্ষা করা এবং নিজস্ব চিন্তাশক্তি ও সৃজনশীলতাকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত। এই গবেষণা প্রযুক্তির সুবিধার পাশাপাশি এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে।

0 Comments:

Post a Comment

Designed by OddThemes | Distributed by Gooyaabi