১০ বছরের আলধাবি আলমেহিরির এআই একাডেমি: শিশুদের জন্য প্রযুক্তি শিক্ষার নতুন দিগন্ত

 মাত্র ১০ বছর বয়সে সংযুক্ত আরব আমিরাতের কন্যাশিশু আলধাবি আলমেহিরি সমাজ থেকে লিঙ্গবৈষম্য দূর করার লক্ষ্যে এক অভাবনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তিনি শিশুদের জন্য একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেছেন, যার নাম ‘আলধাবি আলমেহিরির এআই লার্নিং একাডেমি’। এই প্ল্যাটফর্ম শিশু শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তি শিক্ষার পদ্ধতিতে আমূল পরিবর্তন আনবে, যা ৭ থেকে ১৩ বছর বয়সী শিশুদের এআই শিক্ষা দিয়ে বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল সাক্ষরতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করছে।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বব্যাপী ৪৪ শতাংশ শিশু এআই টুল ব্যবহার করে, কিন্তু মাত্র ২৭ শতাংশ শিশু এটি কীভাবে কাজ করে তা বোঝে। বিশ্বের ১০ শতাংশেরও কম প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কাঠামোগত এআই শিক্ষা প্রদান করা হয়। এই প্রেক্ষাপটে, চারবারের গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডধারী আলধাবি এআই মৌলিক নীতি, নীতিশাস্ত্র এবং উদ্যোক্তা বিষয়ে ২০টি ভিডিও-ভিত্তিক পাঠ তৈরি করেছেন। প্রতিটি মডিউলে মুদ্রণযোগ্য ওয়ার্কশিট এবং ব্যবহারিক প্রকল্প রয়েছে, যা বিমূর্ত ধারণাগুলোকে শিশুদের জন্য বাস্তব অভিজ্ঞতায় রূপান্তরিত করে।

আলধাবি বলেছেন, “আমি চাইনি আমার পাঠগুলো খুব বেশি আনুষ্ঠানিক মনে হোক। তাই আমি সহজ ভাষা, বন্ধুত্বপূর্ণ কার্টুন চরিত্র এবং এমন উদাহরণ ব্যবহার করেছি, যেগুলোর সঙ্গে শিশুরা সহজেই সম্পর্কিত হতে পারে।”

গবেষণা তার এই পদ্ধতিকে সমর্থন করে। সমবয়সীদের দ্বারা ডিজাইন করা বিষয়বস্তু বোধগম্যতা ও ধারণক্ষমতা ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ায়, বিশেষ করে বিমূর্ত বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে। ‘বাচ্চাদের দ্বারা বাচ্চাদের জন্য’ তৈরি উপকরণ থেকে শেখার সময় শিশুরা তিনগুণ বেশি প্রশ্ন করার সম্ভাবনা দেখায়।

আলধাবির প্ল্যাটফর্ম মেনা অঞ্চলের মধ্যম বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এআই অংশগ্রহণে ৩০ শতাংশ লিঙ্গবৈষম্য দূর করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। ‘গার্লস ইন এআই’ ওয়ার্কশপগুলোর মাধ্যমে শিশুরা এআই মডিউলের পাশাপাশি মেশিন বনাম মানব বুদ্ধিমত্তার বিষয়ে জানতে পারবে। এছাড়া, একাডেমিতে উদ্যোক্তা বিষয়ক পাঠ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা শিশুদের গোপনীয়তা, ন্যায্যতা এবং দায়িত্বের মতো মূল্যবোধ শেখায় এবং নির্মাতার মতো চিন্তা করতে উৎসাহিত করে।

আলধাবির মতে, “আমি চাই শিশুরা কেবল ভোক্তা নয়, নির্মাতার মতো অনুভব করুক। তারা নির্মাণ করতে পারে, নেতৃত্ব দিতে পারে এবং অল্প বয়সেই শুরু করতে পারে।” প্ল্যাটফর্মটি শিশুদের ডেটা সুরক্ষা নিশ্চিত করে, অভিভাবকদের সম্মতি বাধ্যতামূলক করে এবং আরবি ও ইংরেজি ভাষায় কনটেন্ট সরবরাহ করে। এটি জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যার মধ্যে রয়েছে মানসম্মত শিক্ষা, লিঙ্গ সমতা এবং বৈষম্য হ্রাস।

আলধাবির শিশু-কেন্দ্রিক মডেলটি তৃণমূল পর্যায়ে পরিমাপযোগ্য এবং সাংস্কৃতিকভাবে প্রযোজ্য সমাধান প্রদান করে। তার প্রকাশনা সংস্থা ‘রেইনবো চিমনি’ ইতোমধ্যে হাজার হাজার শিশু পাঠকের কাছে পৌঁছেছে। এই নতুন একাডেমিও এআই শিক্ষার ক্ষেত্রে একইভাবে সাফল্য অর্জন করতে পারে।

তিনি বলেন, “প্রযুক্তি শুধু প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য নয়। শিশুরাও এটি বুঝতে, গঠন করতে এবং ভবিষ্যতে এর দায়িত্ব নিতে পারে—যদি আমরা তাদের সুযোগ দিই।”

0 Comments:

Post a Comment

Designed by OddThemes | Distributed by Gooyaabi