মোবাইল আসক্তি: প্রতিদিন ৪ ঘণ্টার বেশি সময় পর্দায়, কীভাবে মুক্তি পাবেন?

 আমরা প্রতিদিন গড়ে ৪ ঘণ্টা ৩৭ মিনিট মোবাইলে কাটাই এবং দিনে প্রায় ৫৮ বার ফোন চেক করি। সামাজিক যোগাযোগ, কাজ বা খবর পড়ার কথা বললেও বাস্তবে অনেকেই মোবাইল আসক্তিতে ভুগছেন। এই আসক্তি শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, যা একটি ক্রমবর্ধমান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।

আসক্তির মাত্রা ও প্রভাব
যুক্তরাষ্ট্রের এক সাম্প্রতিক জরিপে ৫৭ শতাংশ মানুষ স্বীকার করেছেন, তারা মোবাইল আসক্তির শিকার। যুক্তরাজ্যের নটিংহাম ট্রেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানী জাহির হোসেন বলেন, “মোবাইলের সমস্যাজনক ব্যবহার মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা যেমন হতাশা ও উদ্বেগের সঙ্গে জড়িত।” মোবাইল আসক্তি ঘুমের ব্যাঘাত, চোখের সমস্যা, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা, ঘাড়-পিঠের ব্যথা, হতাশা, উদ্বেগ, একাকীত্ব এবং বিশেষত কিশোরদের মধ্যে মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তির ক্ষতির কারণ হচ্ছে।

কেন আমরা আসক্ত হচ্ছি?
মোবাইল আসক্তি একটি আচরণগত আসক্তি, যেখানে কোনো নেশাজাতীয় পদার্থ ছাড়াই মস্তিষ্কে নেশার মতো প্রভাব তৈরি হয়। পারিবারিক চাপ, হতাশা বা উদ্বেগ থেকে মুক্তি পেতে অনেকে মোবাইলে ডুবে যান। সামাজিক অ্যাপ, একঘেয়েমি এবং দৈনন্দিন অভ্যাস বারবার মোবাইলের দিকে হাত বাড়াতে প্ররোচিত করে।

কীভাবে মোবাইল ব্যবহার কমাবেন?
মোবাইল আসক্তি দূর করার তাতক্ষণিক সমাধান নেই, তবে বিজ্ঞানীরা কিছু কার্যকর পদ্ধতি প্রস্তাব করেছেন:
১. রাতে মোবাইল হাতের নাগালের বাইরে রাখা।
২. পড়াশোনা বা কাজের সময় ফোন অন্য ঘরে রাখা।
৩. নোটিফিকেশন বন্ধ করা বা ‘ডু নট ডিস্টার্ব’ মোড ব্যবহার।
৪. স্ক্রিন সাদাকালো করা এবং সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ হোম স্ক্রিন থেকে সরিয়ে ফেলা।
৫. লম্বা পাসকোড ব্যবহার করে ফোন খোলাকে জটিল করা।
‘স্পেস’, ‘ফরেস্ট’, ‘ফ্লিপড’ বা ‘স্ক্রিনটাইম’–এর মতো অ্যাপ ব্যবহার করে মোবাইল ব্যবহারের সময় সীমিত করা এবং মনোযোগ নষ্টকারী অ্যাপ লক করা সম্ভব।

বিজ্ঞানের পরামর্শ
কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের আসক্তি মনোবিজ্ঞানী জে ওলসনের গবেষণায় দেখা গেছে, দশ ধাপের ‘নাজ-ভিত্তিক’ পদ্ধতি মোবাইল ব্যবহার কমাতে কার্যকর। এতে ফোনের ব্যবহার অস্বস্তিকর করা, নোটিফিকেশন কমানো এবং ব্যবহারে ঘর্ষণ তৈরির মতো কৌশল রয়েছে, যা ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত ফল দিয়েছে। শারীরিক কার্যক্রম, যেমন হাঁটাহাঁটি, খেলাধুলা বা ব্যায়াম, মোবাইলের বিকল্প হিসেবে কাজ করে এবং একাকীত্ব ও উদ্বেগ কমায়। প্রকৃতির সান্নিধ্যও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

কখন সহায়তা নেবেন?
যদি মোবাইল ব্যবহার মানসিক স্বাস্থ্য, সম্পর্ক বা দৈনন্দিন জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, তবে পেশাদার সহায়তা নেওয়া প্রয়োজন। মনন ও আচরণগত থেরাপি (সিবিটি) আসক্তির মূল কারণ চিহ্নিত করে ধাপে ধাপে নির্ভরশীলতা কমাতে সহায়ক।

0 Comments:

Post a Comment

Designed by OddThemes | Distributed by Gooyaabi